NEWS IN BENGALI

অসংখ্য পরিযায়ী পাখির মৃতদেহ ছড়িয়ে পড়ে আছে শুকসাগর জলার চারিপাশে


মাংস প্রেমী মানুষ অত্যধিক আনন্দে তা কুঁড়িয়ে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। অদ্ভুত ও হৃদয় বিদারক ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে  হতবাক করে তুলেছে পরিবেশ সচেতন মানুষদের। এতটা অমানবিক হতে পারে মানুষ? স্বাধীন চলাফেরার পরিযায়ী পাখিরা আর কি ঘুরে বেড়াতে দেখা যাবে গোমতী ত্রিপুরা জেলা উদয়পুরের আকাশে?- এই প্রশ্নই এখন পরিবেশ ও পাখি প্রেমী মানুষদের। এত এত অতীব সুন্দর পরিযায়ী পাখির মৃত্যুর ঘটনার খবর রাজ্যের পরিবেশ কিংবা বন দপ্তরের কর্তাদের কানে পৌঁছলো না। তবে নিরপরাধ পাখিগুলির মৃত্যুর খবরের ঘটনায় সরকারের দপ্তরের কোনো ব্যক্তিকে সারাদিন দেখা মেলে নি। দূর দেশ থেকে প্রতি বছর শীতের মরশুমে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমায় উদয়পুরের নানা সরোবর, বিল, জলাতে।

এটাই শীতকালীন সময়ের বিকেলে উদয়পুরের পরিচিত ছবি। পাখী প্রেমীরা এই পরিযায়ী সুন্দর পাখিদের ছবি নিজেদের সংগ্রহে রাখতে ক্যামেরায়, মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যাশব্যাক চাপেন।   গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে পরিযায়ী পাখিরা উদয়পুরের শুক সাগর জলাতে দল বেধে নামা শুরু করেছিল। এবার মাংসপ্রেমী অমানুষদের খপ্পরে পড়তে হলো তাদের। আর তাতেই জীবন গেলো অতীব সুন্দর পরিযায়ী পাখিদের।  শুকসাগর জলার মাঝে উদয়পুর রেল স্টেশন গড়ে উঠার পর থেকে বহু দেশের সীমানা পেড়িয়ে পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসা শুরু করেছিল। কোন সময় এবারের মতো অমানবিক ঘটনা প্রত্যক্ষ হয় নি। রেল স্টেশনের একদিকে মাতাবাড়ি, অন্যদিকে খিলপাড়া এলাকার বসতি মানুষেরা গত এত বছরে এই পাখিদের মেরে মাংস খাবেন তা ভাবেন নি।

দূরবর্তী এলাকার কয়েকজন যুবকের কু-নজরে পড়ে এই পরিযায়ী পাখিরা। এরাই নাকি রাতে ধানের সাথে বিষাক্ত ঔষধ মিশিয়ে শুকসাগর জলার একটা বড় অংশের জমিতে ছিটিয়ে ফাঁদ পেতে যায়। আর সেই ফাঁদে সকালে পরিযায়ী পাখিরা সেই ধান খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার পরই শুরু হয় মৃত্যুর ঘটনা। ঔষধ মেশানো ধান খাওয়ার পরই পাখিগুলি ছটপট করতে থাকে এবং বাঁচার তাগিদে উড়তে শুরু করে।   কিন্তু বেশী দূর উড়তে পারে নি। উড়তে উড়তে যেখানে জীবনদ্বীপ নিভে গেছে সেখানেই লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। ফলে গোটা শুকসাগর জলার চারিপাশে অসংখ্য পরিযায়ী পাখিদের মৃতদেহ ছিটিয়ে পড়ে আছে। ফাঁদ পাতা যুবকের দল সকালে এসে বস্তায় ভরে দু'বস্তা নিয়ে গেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের খবর।

এরপরই স্থানীয় মানুষরাও পরিযায়ী পাখিদের মৃতদেহ ঘরে তুলে নিয়ে যায়। প্রায় প্রত্যেকের ঘরেই রাতে মেনু পরিযায়ী পাখির মাংস। আরো কত পাখির মৃতদেহ খুঁজলে পাওয়া যাবে তা বলা মুশকিল। অনুমান প্রায় দেড়শ খানেক মৃত্যু হয়েছে। পরিযায়ী পাখির মৃতদেহগুলি দেখে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে এদের নাম 'সোয়েমফেন'। বালি হাঁস প্রজাতির হতে পারে। আমেরিকা ফ্লোরিডার পাখি এগুলি সাধারনত। ত্রিপুরায় এই প্রজাতির পরিযায়ী পাখি খুব কমই আসে। ভারতের কেরালায় শীতকালে এই পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে খুব। বৈজ্ঞানিক নাম 'পরফিরি''পলিওসিফেলাস'। প্রধানত আমেরিকার পাখি হলেও সোয়েমফেন-এর এই প্রজাতি(ধূসর মাথা) শীতকালে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার নানা প্রান্তে দেখতে পাওয়া যায়।

শীতকালে পরিযায়ী হিসাবে দেশ, সীমানার গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়ায় এবং শীত শেষ হলে আবার চলে যায়। উদয়পুরে গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে শুকসাগর জলাতে এই 'সোয়েমফেন' নামের পরিযায়ী পাখিরা আসছিলো। আর আসবে কিনা কিংবা এদের স্বজনদের কাল আর দেখা যাবে কিনা শুকসাগর জলায় জানা নেই। পাখি বলে এদের হত্যাকারীকে আর হয়তো খুজবে না কেউ। তবে এই পাখি হত্যাকারীরা নষ্ট করে গেলো পরিবেশ। ধ্বংস হয়ে গেলো শীতের সময়ের খাল,   বিলের অসাধরন সৌন্দর্য্যের। মানুষ আর কবে সঠিক অর্থে মানুষ হয়ে উঠবে? সেই খবরের বিষয়ে গোমতী জেলা বনদপ্তর আধিকারিক মহেন্দ্র সিং- এর সাথে সাক্ষাৎ করে উদয়পুরের কয়েকজন সাংবাদিক। বিস্তারিত ঘটনা জানতে পেরে নড়েচড়ে বসে বনদপ্তর আধিকারিকরা। ছুটে যায় সুখ সাগর জলাশয় ঘটনার তদন্তে।

Most Recent